সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৪

এক নজরে নাটোর

Be the first to comment!

























নজরে নাটোর


এক নজরে নাটোর

ভারতবর্ষের ইতিহাসে নাটোর একটি বিশিষ্ট স্থানের নাম । এই নাম তার শাসকশ্রেণী এবং তার অধিবাসীদের জীবনসংগ্রাম আর সংস্কৃতির কারণেই ইতিহাস বিখ্যাত । পাঠান-মোঘল-ইংরেজ এমনকি পাকিস্তানি দুঃশাসনের ইতিহাসে যুগে যুগে শোষণ বঞ্চণা আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে আত্ম অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য হয়ে আছে । ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬২ এর সাম্প্রদায়িক শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন , ৬৬ এর ছয় দফার সমর্থনে আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান এবং ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে নাটোরবাসির অবদান দেশের অপরাপর জেলাগুলোর চেয়ে কম নয় । সে কারণে নাটোর ঐতিহাসিকভাবে শুধু ভারতবর্ষের ইতিহাসেই নয়, সভ্য দুনিয়ার সকল দেশে তার স্বতন্ত্র্য পরিচিতি আছে ।

নাটোর মোগল শাসনামলের শেষ সময় থেকে বাংলার ক্ষমতার অন্যতম প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয় । বিশেষ করে নবাবী আমলে তার ব্যাপক ব্যাপ্তি ঘটে । বাংলার সুবেদার মুর্শিদ কুলী খানের (১৭০১-১৭২৭ শাসনকাল) প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বরেন্দ্রী বাহ্মণ রঘুনন্দন তার ছোটভাই রামজীবনের নামে এতদ্অঞ্চলে জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন । রাজা রামজীবন রায় নাটোররাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা। কথিত আছে লস্কর খাঁ তার সৈন্য-সামন্তদের জন্য যে স্থান হতে রসদ সংগ্রহ করতেন, কালক্রমে তার নাম হয় লস্করপুর পরগনা। এই পরগনার একটি নীচুচলাভূমির নাম ছিল ছাইভাংগা বিল। ১৭১০ সনে রাজা রাম জীবন রায় এই স্থানে মাটি ভরাট করে তার রাজধানী স্থাপন করেন। কালক্রমে মন্দির, প্রাসাদ, দীঘি, উদ্যান ও মনোরমঅট্টালিকা দ্বারা সুসজ্জিত নগরীতে পরিণত হয়। ধীরে ধীরে ছাইভাংগা বিলের উপরে প্রতিষ্ঠিত হয় নাটোর শহর। সুবেদার মুর্শিদ কুলী খানের সুপারিশে মোঘল সম্রাট আলমগীরের নিকট হতে রামজীবন ২২ খানা খেলাত এবং রাজা বাহদুর উপাধী লাভ করেন । নাটোর রাজ্য উন্নতির চরম শিখরে পৌছে রাজা রামজীবনের দত্তক পুত্র রামকান্তের স্ত্রী রাণী ভবানীর রাজত্বকালে । ১৭৮২ সালে ক্যাপ্টেন রেনেল এর ম্যাপ অনুযায়ী রাণী ভবানীর জমিদারীর পরিমাণ ছিল ১২৯৯৯ বর্গমাইল । শাসনব্যবস্থার সুবিধার জন্য সুবেদার মুর্শিদ কুলী খান বাংলাকে ১৩ টি চাকলায় বিভক্ত করেন । এর মধ্যে রাণী ভবানীর জমিদারী ছিল ৮ চাকলা বিস্তৃত । এই বিশাল জমিদারীর বাৎসরিক আয় ছিল দেড় কোটি টাকার অধিক । বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, যশোর এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদা, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম জেলাব্যাপী বিস্তৃত ছিল তার রাজত্ব । এছাড়া ময়মনসিংহ জেলার পুখুরিয়া পরগণা এবং ঢাকা জেলার রাণীবাড়ী অঞ্চলটিও তার জমিদারীর অন্তর্গত ছিল । এ বিশাল জমিদারীর অধিশ্বরী হওয়ার জন্যই বোধহয় তাকে মহারাণী উপাধী দেয়া হয় এবং তাকে অর্ধ-বঙ্গেশ্বরী হিসাবে অভিহিত করা হতো ।একে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল এ অঞ্চলের সর্ববৃহত সামন্তরাজ এবং এক মহিয়ষী নারীর রাজ্য শাসন ও জনকল্যাণ ব্যবস্থা ।

নাটোরের রাজারা এই বিশাল জমিদারী পরিচালনা করতো নিজস্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় । নবাবী আমলে তাদের নিজস্ব দেওয়ানী ও ফৌজদারী বিচারের ক্ষমতা ছিল । শান্তি শৃংখলা রক্ষার জন্য তাদের নিজস্ব পুলিশবাহিনী এবং জেলখানা ছিল । ১৮৭৩ সালে ইংরেজ সরকারের এক ঘোষণাবলে রাণী ভবানীর দত্তকপুত্র রামকৃষ্ণ এর হাত থেকে কোম্পানী পুলিশ ও জেলখানা নিজ হাতে তুলে নেয় । কোম্পানী নিজহাতে জেলখানার দায়িত্ব নিয়ে প্রতি জেলায় জেলখানা স্থাপন করে । ইংরেজদের কর্তৃক পরিচালিত প্রথম জেলখানা নাটোরে প্রতিষ্ঠিত হয় ।

রাণী ভবানীর শাসনামল পর্যন্ত নাটোর শহরের দক্ষিণ পাশ দিয়ে প্রবাহিত হতো স্রোতস্বিনী নারদ নদ । পরবর্তীকালে নদের গতিমুখ বন্ধ হয়ে গেলে সমগ্র শহর এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে নিপতিত হয় । ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বদ্ধজল এবং পয়ঃনিষ্কাশনের একমাত্র সংযোগস্থল ছিল নারদ নদ । সেই নদ অচল হয়ে পড়ায় শহরের পরিবেশ ক্রমাগত দূষিত হয়ে পড়ে । ইংরেজ শাসকরা সেজন্য জেলাসদর নাটোর হতে অন্যত্র স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করে । মি. প্রিংগল ১৮২২ সালে ২৩ শে এপ্রিল জেলাসদর হিসাবে পদ্মানদীর তীরবর্তী রামপুর-বোয়ালিয়ার নাম উল্লেখ করে প্রস্তাবনা পেশ করেন । ১৮২৫ সালে নাটোর থেকে জেলা সদর রামপুর-বোয়ালিয়াতে স্থানান্তরিত হয় । জেলা সদর স্থানান্তরের পর ইংরেজ সরকার মহকুমা প্রশাসনের পরিকাঠামো তৈরি করে । সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী মহকুমা হিসাবে নাটোরের পদাবনতি ঘটে । তারপর দীর্ঘ ১৬৫ বছর অর্থাৎ ইংরেজ, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের চৌদ্দ বছরের প্রশাসনিক ইতিহাসে নাটোর মহকুমাসদর হিসাবে পরিচিত ছিল । ১৯৮৪ সালে নাটোর পুনরায় জেলাসদরের মর্যাদা লাভ করে ।

রাজা রামজীবন রায় ১৭৩০ সালে মৃত্যুবণর করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি রাজা রামকান্ত রায়কে রাজা এবং দেওয়ান দয়ারাম রায়কে তার অভিভাবক নিযুক্ত করেন। রামকান্ত রাজা হলেওপ্রকৃতপক্ষে সম্পূর্ণ রাজকার্যাদি পরিচালনা করতেন দয়ারাম রায়। তাঁর দক্ষতার কারণে নাটোর রাজ বংশের উত্তোরত্তর সমবৃদ্ধি ঘটে। ১৭৪৮ সালে রামকান্ত পরলোকগমন করেন।স্বামীর মৃত্যুর পর রাণী ভবানীকে নবাব আলীবর্দী খাঁ বিসত্মৃত জমিদারী পরিচালনার দায়িত্ব অর্পন করেন। নাটোরের ইতিহাসে জনহিতৈষী রাণী ভবানী হিসেবে অভিহিত এবং আজোতার স্মৃতি অম্লান। বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলার সাথে রাণী ভবানীর আন্তরিক সুসম্পর্ক ছিল। কথিত আছে পলাশীর যুদ্ধে রাণী ভবানী নবাবের পক্ষ অবলম্বন করেন।

পরবর্তীতে রাণী ভবানীর নায়েব দয়ারামের উপরে সন্তুষ্ট হয়ে তিনি দিঘাপতিয়া পরগনা তাকে উপহার দেন। দিঘাপতিয়ায় প্রতিষ্ঠিত বর্তমান উত্তরা গণভবনটি দয়ারামের পরবর্তীবংশধর রাজা প্রমদানাথের সময় গ্রীক স্থাপত্য কলার অনুসরনে রূপকথার রাজপ্রাসাদে উন্নীত হয়। কালক্রমে এই রাজপ্রাসাদটি প্রথমতঃ গভর্নর হাউস, পরবর্তীতে বাংলাদেশ অভ্যূদয়েরপরে উত্তরা গণভবনে পরিণত হয়

নাটোর জেলার যোগযোগ ব্যবস্থা

নাটোর জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রধানত ২ ধরণের। যথাঃ
১। সড়ক পথ
২। রেল পথ

সড়ক পথে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় সকল অঞ্চলের সাথেই এ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে। এই পথে ঢাকা থেকে নাটোর জেলায় পৌছানোর সবচেয়ে সহজ পথ হচ্ছে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু-সিরাজগঞ্জ-নাটোর।

এছাড়াও রেল পথে ঢাকা কমলাপুর রেলষ্টেশন থেকে সরাসরি নাটোরে আসা যায়।

নদী পথে রাজধানী ঢাকার সাথে নাটোর জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল নয়।

বাস: সংশ্লিষ্ট কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করতে হবে
সম্ভাব্য সময়সূচী: প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর
যাত্রী প্রতি ভাড়া: ২৫০-৪৫০/-

ট্রেন: নাটোর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে সংগ্রহ করতে হবে
সময়সূচী: বেলা ১২টা, দুপুর ৩টা, রাত ১২টা
যাত্রী প্রতি ভাড়া: ১৩৫-২৫০/-

নাটোর জেলার পত্র পত্রিকা সম্পর্কিত তথ্য

পত্রিকার নামঃ দৈনিক উত্তরবঙ্গ বার্তা
প্রকারঃ দৈনিক সংবাদপত্র
প্রকাশের সময়ঃ প্রথম প্রকাশ ১৫ মে ১৯৯৭
পত্রিকার প্রধানের নামঃ জনাব এ্যাডঃ মোঃ হানিফ আলী শেখ, সম্পাদক

পত্রিকার নামঃ দৈনিক জনদেশ
প্রকারঃ দৈনিক সংবাদপত্র
প্রকাশের সময়ঃ প্রথম প্রকাশ ০৮ মে ২০০৩
পত্রিকার প্রধানের নামঃ আলহাজ্ব এ্যাডঃ এম. রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক

পত্রিকার নামঃ সাপ্তাহিক নাটোর বার্তা
প্রকারঃ সাপ্তাহিক পত্রিকা
প্রকাশের সময়ঃ প্রথম প্রকাশ ১৮ আগষ্ট ১৯৯২
পত্রিকার প্রধানের নামঃ বেগম ফজিলা নজরুল, সম্পাদক

এছাড়াও দৈনিক উত্তরকন্ঠ , দৈনিক নাটোরের কথা, দৈনিক প্রান্তজন , সাপ্তাহিক গণজীবন ও দৈনিক সংবাদপত্র নামের দুইটি পত্রিকা ছাপা হয়।

খেলাধূলা ও বিনোদন
এলাকার বিনোদন ধর্মীয় অনুইষ্ঠানঃ
পালাগানঃ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যেমনঃ চৈত্র সংক্রান্তি,রথযাত্রা, পৌস
পার্বন, বাস্তপূজা,কালিপূজা,দশহারা, শিবরাত্রি, মহরম, পৌষ সংক্রান্তি ইত্যাদিতে
পালাগান অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
যাত্রা ঃ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব যেমনঃ দূর্গাপূজা, কালিপূজা উপলক্ষ্যে যাত্রা গান অনুষ্ঠিত হয়ে
থাকে।
মেলা ঃ জেলার বিভন্ন স্থানে প্রতি বছর চড়ক মেলা, চৈত্র সংক্রান্তির মেলা, নৌকা বাইচ মেলা,
পৌষমেলা, বৃক্ষমেলা,কৃষিমেলা, বইমেলা , বৈশার্খী মেলা ঈদ মেলা ইত্যাদি অনুষ্ঠিত
হয়ে থাকে।
নাটোর জেলার খেলাধুলা ও মাঠের তথ্যঃ-
• জেলায় বিশেষ উল্লেখযোগ্য খেলার নাম ও বিবরণঃ- ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, কাবাডি, হ্যান্ডবল, দাবা, সাঁতার, ব্যাডমিন্টন ও এ্যাথলেটিকস। এ খেলাগুলো অত্র জেলায় প্রচলন আছে।
• খেলাধুলার স্থানঃ জেলা ও উপজেলা সদরে অবস্থিত স্টেডিয়াম এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে উল্লেখিত খেলাধুলা অনুষ্ঠিত হয়।
খেলাধুলার মাঠ, স্টেডিয়াম অবস্থানঃ
• নাটোর জেলায় মোট ১২০টি মাঠ রয়েছে। এগুলো উপজেলা সদরে পাইলট স্কুল ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থিত।
• নাটোর জেলায় ৩টি স্টেডিয়াম রয়েছেঃ
১। নাটোর শংকর গোবিন্দ চৌধুরী স্টেডিয়াম, নাটোর সদর।
২। কানাইখালী স্টেডিয়াম, নাটোর সদর।
৩। লালপুর উপজেলা স্টেডিয়াম।
বাৎসরিক অনুষ্ঠিত খেলার বিবরণঃ
নাটোর জেলায় ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবর, কাবাডি, হ্যান্ডবল, দাবা, সাঁতার, ব্যাডমিন্টন এবং এ্যাথলেটিকস খেলা অনুষ্ঠিত হয়

ভাষা ও সংস্কৃতিঃ
নাটোরের লোকজ সংস্কৃতির ভান্ডার সমৃদ্ধ, বৈচিত্র্য অফুরন্ত। যে কোনো প্রাচীন জনপদ সচরাচর লোকসংস্কৃতিতে ধনী হয়ে থাকে। নাটোর জেলাও তার ব্যতিক্রম নয়। নাটোরের শহরাঞ্চলের ক্ষুদ্র গন্ডী পেরিয়ে গেলেই পাওয়া যায় লোকজ সংস্কৃতির বেগবান ধারার খোঁজ।
অন্যদিকে আছে লোকজ বা গ্রাম্য ধাঁধা যাকে নাটোরের কোনো কোনো অঞ্চলে ‘মান’ বলা হয়। সাধারণ পল্লীবাসী মানুষকে মোটাবুদ্ধির বলে অবজ্ঞা করার যে স্বভাব আমাদের শহুরে পন্ডিতদের মধ্যে দৃশ্যমান, তার প্রকৃষ্ট প্রতিবাদ হচ্ছে পল্লীবাসী সাধারণ মানুষ কর্তৃক ধাঁধার সৃষ্টি। কোনো জিনিসকে বা বস্ত্তকে প্রত্যক্ষভাবে না বলে ধাঁধার মাধ্যমে প্রহেলিকা সৃষ্টি করে বলাটা একধরনের উচ্চাঙ্গের শিল্পসৃষ্টিও বটে।
নাটোর জেলার ধাঁধাসমূহ শিশু-কিশোরদের পাশাপাশি বড়দেরও বিমল আনন্দের সামগ্রী। মানুষের, বিশেষত শিশু-কিশোরদের বুদ্ধিবৃত্তির প্রখরতা বৃদ্ধি ও জ্ঞান অনুশীলনের প্রকৃষ্ট পন্থা। গ্রামাঞ্চলের মুরুবিবরা সন্ধ্যায় সারাদিনের কর্মক্লান্ত দেহ এলিয়ে ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি নিয়ে দাওয়ায় বা উঠোনে সপ-পাটি-মাদুর বিছিয়ে শুয়ে-বসে ধাঁধা বা মান ভান্ডারের আসর বসান। যে বা যারাই এই ধাঁধাগুলির সৃষ্টি করুক না কেন, তাদের মেধা ওপ্রত্যুৎপন্নমতিত্বের কথা ভাবলে মাথাটা শ্রদ্ধায় নত হয়ে আসে। চকিত বুদ্ধির ঝিলিক, পরস্পর সম্পৃক্ত বস্ত্তগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক আর তীব্র কৌতূকের ঝলকানির সমন্বয় দেখা যায় এই ধাঁধাগুলিতে।
ধাঁধার পাশাপাশি নাটোর জেলার সর্বত্র লোকে মুখে মুখে অসংখ্য প্রবাদ-প্রবচন আউড়ে থাকে। এই প্রবাদ-প্রবচনে কৃষি, আবহাওয়া, সমাজতত্ত্ব, সামাজিক অবস্থাসহ জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার সারাৎসার উৎসারিত হয়েছে। সরদার আবদুল হামিদ লিখেছেন- ‘প্রবাদ প্রবচন লোকসাহিত্যের মূল্যবান সামগ্রী। সরস ছন্দবহ ভাবব্যঞ্জক বাক্য বা বাক্যসমষ্টিই প্রবাদ। অনুভূতিপ্রবণ মানবমনের অভিজ্ঞতা হতে প্রবাদের জন্ম। প্রবাদকে খন্ড জ্ঞানভান্ডার বলা চলে। এক একটি প্রবাদবাক্য হীরার টুকরার ন্যায় দামী। সাগরের বুকে যেমন মণি-মুক্তা লুক্কায়িত থাকে, তেমনি মানবমনের গহীনে যুগ যুগ ধরে সঞ্চিত হয় প্রবাদরূপ রত্নরাজি। প্রবাদের মাধ্যমে আমরা পেয়ে থাকি চিরন্তন জ্ঞানের কথা, অজানা রহস্যের কথা, আনন্দঘন হাস্যরস ও কৌতুকের কথা যা মনকে সাময়িক আনন্দে উৎফুল্ল করে তোলে। তাই প্রবাদ বাক্য যেমন আনন্দের খোরাক, তেমনই এর উপদেশমালা চিন্তার খোরাকও বটে। দেখা যায়, পল্লীর প্রবীণ লোকেরা কথায় কথায় প্রবাদ আওড়ান। এগুলো যেন তাদের রক্তের সাথে মিশে আছে। প্রাসঙ্গিক প্রয়োজনে তাদের মুখ দিয়ে স্বতঃস্ফুর্তভাবে বেরিয়ে আসে রাশি রাশি প্রবাদ বচন। স্থান-কাল-পাত্রভেদে কোথায় কোনটি প্রযোজ্য, অন্তর-ভান্ডার খুঁজে বের করতে তাদের আদৌ বেগ পেতে হয় না। (দ্রষ্টব্য: চলনবিলের লোকসাহিত্য। প্রকাশক- বাংলা একাডেমী, ঢাকা।)
নাটোর জেলার মাদার গান
মাদারের গান বা মাদার গান নাটোর জেলার নিজস্ব লোকসঙ্গীত হিসাবে পরিচিত। বাংলাদেশের অন্য কোনো অঞ্চলে এই গানের আসর বসলেও তা মূলত নাটোর জেলা থেকেই ধার করা। নাটোরের সর্বত্র মাদারগানের আসর ছিল একসময় নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। মাদারের গান বা মাদার পীরের গান অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল একসময়। যদিও মাদার পীর নামক কোনো পীরের দরগা বা মাজার নেই কোথাও, তবু মাদার পীরের নামে মানত বা মানসিক করার চল আছে জেলার সর্বত্র। বিশেষ করে নাটোর জেলা সদর ও চলনবিল অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে। সন্তান কামনায়, রোগ-শোক থেকে নিরাময় কিংবা বিপদ থেকে উদ্ধারের আশায় লোকে মাদার পীরের নামে মানসিক করে। তারা পীরের দোহাই দিয়ে মানত করে যে বিপদ থেকে উদ্ধার পেলে মাদারেরর গানের আসর বসাবে।
একসময় এই অঞ্চলের গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-বাজারে, মাঠে-ময়দানে, উঠোনে-দাওয়ায় আসর বসতো মাদারগানের। পথে-প্রান্তরে প্রতিনিয়ত প্রতিধ্বনিত হতো মাদার গানের সুর। পথ চলতে, লাঙল দিতে, জমি নিড়াতে, গরু চরাতে- সর্বত্রই মানুষের গলা চিরে বেরুত এই মাদার গানের ধূয়া। বিশেষ করে আসর বসতো মহররমের চাঁদ উঠলে, কলেরা-বসন্ত দেখা দিলে, জমিতে মড়ক দেখা দিলে।
মাদার পীর কোনো বাস্তব পীর নন। তার অস্তিত্ব কাল্পনিক, মারেফতি ধরনের। কিংবদন্তী আছে যে হারুত-মারুত নামের দুই ফেরেশতা একবার পৃথিবীতে আসেন জীবন পর্যবেক্ষণ করতে। তারা এসে এক সুন্দরী নারীর প্রেমে পতিত হন। তারা সেই নারীর প্রেমে এমনভাবে আসক্ত হয়ে পড়েন যে, ভুলেই যান তারা ফেরেশতা। তাদের প্রেমের ফলেই জন্ম হয় মাদার পীরের। তার জন্মের অব্যবহিত পরেই ফেরেশতারা খোদার ইচ্ছায় নিজেদের ভুলে যাওয়া সত্ত্বার কথা মনে করতে পারেন ফের। তারা এই দুনিয়া ত্যাগ করে চলে যান আসমানে তাদের নিবাসে ও কর্মক্ষেত্রে। একদিন হযরত আলী (রাঃ) শিকারে এসে কাপকুপের জঙ্গলে কুড়িয়ে পান শিশুকে। পুত্রেরমতো লালন-পালন করেন। পরবর্তীতে মারফতি তরিকায় কঠোর সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন মাদার পীর। এবং এসমে আজমের মাধ্যমে দম বা শুমার ধরে অনেক অসাধ্য সাধনের শক্তি অর্জন করেন। অর্জিত এই শক্তি বা মাহাত্ম মানবকল্যাণে লাগানোর জন্য তিনি ঘুরে বেরিয়েছেন দেশে-দেশান্তরে। তার এক-একটি কেরামতি নিয়ে এক-একটি পালা রচিত হয়েছে। এইরকম তার কয়েকটি পালার কথা জানা যায়। যেমন জিন্দাশাহ মাদার, আসকান মাদার, তালেমুল মাদার, খাতেমুল মাদার ইত্যাদি। এক এক পালায় এক এক নামে আবির্ভাব ঘটে শাহ মাদার পীরের। যেমন- ‘সমশের গোলাব’ পালায় রুহানী বা আধ্যাত্মিক শক্তি নিয়ে মাদার পীর পাল্লা দেন বড়পীর হযরতআবদুল কাদের জিলানী (রঃ)-র সাথে। রাজা ছিলছত্র একবার শিশু ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেন (রঃ)-কে চুরি করে নিয়ে যায় তার দেশে। রাজা ছিলছত্রের দেশ হচ্ছে আরব মুলুক থেকে অনেক দূরে- সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে। হাসান-হোসেনকে মুক্ত করতে সেই দেশে যান মোহাম্মদ হানিফা। কিন্তু তিনিও বন্দী হন রাজা ছিলছত্রের সৈন্যদের হাতে। এই সংবাদে ক্রুদ্ধ হয়ে ছুটে যান মাদার পীর। তিনি বন্দী করেন রাজা ছিলছত্রকে। কিন্তু হাসান-হোসেনকে কোথায় বন্দী করে রেখেছে, তা কিছুৃতেই জানায় না রাজা ছিলছত্র। তখন মাদার পীর তার ঝোলার মধ্যে ভরে ছিলছত্রের গোটা রাজ্যটাই তুলে আনেন। তারপর মা ফাতেমা (রাঃ) এর সামনে এনে মেলে ধরেন ঝোলা এবং খুঁজে নিতে বলেন তাঁর পুত্রদের।
আর সব লোকগীতির মতো মাদার গানের আসর বসে খুব সাদাসিধেভাবে। সামিয়ানা টাঙিয়ে তার নিচে পাটি-সপ-মাদুর বিছিয়ে বসে এই গানের আসর। কলা-কুশলীর সংখ্যাও বেশি নয়। প্রধান চরিত্র দুইজন।মাদার পীর এবং তার শিষ্য জুমল শাহ। এছাড়া আছে কয়েকজন দোহার-বাইন। দোহার-বাইনরা জটলা করে বসে আসরের মাঝখানে। তাদের হাতে থাকে খঞ্জনি। তাদের চারপাশে বৃত্তাকারে ঘুরে ঘুরে গান গায় মাদার পীর ওজুমল শাহ। তাদের হাঁক-গানের সাথে ধূয়া ধরে দোহাররা। সওয়াল-জবাব-বিবৃতি সবকিছু করে মাদার জুমল দুইজনই। এদের পেছনে পেছনে গান-বাজনার তালে তালে নাচে নর্তকী। মাদার গানের নর্তকীর স্থানীয় নাম ছুকরি।ধুতি-শাড়ি-থান পরে পুরুষরাই ছুকরি সাজে এই গানে। দোহারদের বা জুমল শাহের জন্য অন্য কোনো সাজ-পোশাক নেই। শুধু মাদার পীরের জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ পোশাকের। তার পরনে থাকে অজানুলম্বিত আলখাল্লা,গলায় তসবিহ, মাথায় থাকে শিরস্ত্রাণ, হাতে আশা (লাঠি)।
পদ্মপুরাণ বা মনসার গান ও ভাসানযাত্রা
এই দুই পালার মধ্যে সাযুজ্য থাকলেও নাটোরের বিভিন্ন অঞ্চলভেদে কিছুটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
পদ্মপুরাণ নাটোর অঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য কাব্য আলেখ্য। সাপের দেবী মনসা বা পদ্মার নাম অনুসারে এই নামকরণ। এই গান বর্ণনামূলক। স্থানীয় লোকবিশ্বাস এই যে প্রতি বছর মনসার গানের আয়োজন করলে সর্পাঘাতে পরিবারের কারো অকাল মৃত্যু ঘটবে না। মনসা পূজা উপলক্ষে গ্রামাঞ্চলে তো বটেই, শহরের কোনো কোনো বাড়িতে এখনো পদ্মপুরাণের আসর বসানো হয়। এটি নিতান্ত বর্ণনামূলক গান। সুতানাগের দংশনে লক্ষীন্দরের মৃত্যু থেকে শুরু করে আগাগোড়া বেহুলারই কাহিনী। প্রথম দিকে একটানা সাপের গীত আর সাপের বর্ণনা। নানা প্রকার ও নানা জাতের বাস্তব ও কাল্পনিক সাপের বর্ণনায় পূর্ণ এই গানের প্রথম অংশ। শেষে বর্ণনা করা হয় ভুরা বা ভেলা ভাসিয়ে বেহুলার ইন্দ্রপুরীতে গমন ও মৃত স্বামীর প্রাণ ফিরে পাওয়ার বর্ণনা।

অন্যদিকে ভাসান গান মূলত চলনবিল অঞ্চলের পদ্মপুরাণের একটি রূপান্তর। জনশ্রুতি আছে যে চাঁদ সওদাগরের সপ্তডিঙ্গা মধুকর যে কালীদহ সাগরে নিমজ্জিত হয়, চলনবিলই সেকালের সেই কালীদহ সাগর। ভাসান গানের মূল পর্ব বেহুলা আর লক্ষীন্দরের গীতগাথা হলেও এই কাহিনীর শাখা-প্রশাখা আছে অনেক। যেমন- ধন্মন্ত সওদাগর, শ্রীমন্ত সওদাগর, কুটিশ্ সওদাগর, কুটিশ্ সওদাগরের স্ত্রী কমলা সুন্দরী প্রভৃতি।
বিয়ের গীত
বিয়ের সময় নাটোরের গ্রামাঞ্চলে মেয়ে মহলে নৃত্য-গীতের প্রচলন খুবই বেশি। গ্রামাঞ্চলে বিয়ের গান এখনো স্বমহিমায় তার অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। বিয়ের গীত শুরু হয় পাত্র ও কন্যাপক্ষের কথা পাকাপাকি হওয়ার সময় থেকে। চলতে থাকে বিবাহের সম্পূর্ণ অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত। কখনো কখনো সাতদিন যাবৎ চলতে থাকে এই ধরনের অনুষ্ঠানমালা।বিবাহের তারিখের তিন দিন আগে বর ও কনের বাড়িতে প্রথমে ‘ঢেঁকিপূজা’,তারপরের দিন ‘হেঁসেল পূজা’ এবং পরের দিন ‘খরতাগা’ করা হয়। উল্লেখ্য হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে বিয়ে বাড়িতে এই অনুষ্ঠানগুলি করা হয়। এখন হয়তো মুসলমান পরিবারে পূজা শব্দটি উচ্চারণ করা হয় না, কিন্তু সকল উপাচার পালন করা হয় সবিস্তারে।
নাটোরের বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রতিটি পর্বে একাধিক নৃত্য-গীতের সমাহার দেখা যায়। খরতাগার দিন বর ও কনের দাদি, নানি, সম্পর্কিত ভাবীরা, জেলেনী ও মেথরানীর সাজে সঙ সেজে নাচে আর গীত গায়। জেলেনীর মাথায় থাকে মাছের ডালি, মেথরানীর মাথায় বালতি, কোমড়ে বাঁধা ঝাঁটা।
বরযাত্রী এসে পড়লে বরের পাশে সবসময় বসে থাকে বরের ভগ্নিপতি স্থানীয় কেউ, যার সাথে ঠাট্টার সম্পর্ক চালু। স্থানীয় ভাষায় তাকে বরের ‘কোলদারা’ বলা হয়।
এছাড়াও নাটোর জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে আছে অসংখ্য মুর্শিদী গান, ধূয়া গান, বারমাসি গান, জারিগান, নৌকা বাইচের গান, লোককাহিনী, মুখা খেলা, বিচ্ছেদ গান, টপ্পা গান, কবি গান, যোগীর গান, হাপু গানসহ লোকজ সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান। কিছু কিছু বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিছু কিছু দ্রুত বিলীয়মান। সেগুলি সম্পূর্ণরূপে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন ব্যাপক ও ধারাবাহিক কর্মযজ্ঞ। আমাদের সার্বিক সাংস্কৃতিক জাগরণ ও মুক্তির লক্ষ্যে এই লোকজ সংস্কৃতি পালন করতে পারে প্রভাবকের ভূমিকা। শুধু সেই কারণে হলেও আমাদের অগ্রসর হতে হবে লোকজ সংস্কৃতির যাবতীয় উপাদানের সংগ্রহে ও সংরক্ষণে।
লোকসংস্কৃতির অন্তর্গত পালা-গান-নৃত্য-খেলা প্রভৃতি শুধু লিখিতভাবে সংগ্রহ করলে তা অনেকটা মূল্যহীন হবে। কেননা লিখিতভাবে শুধু বাণীগুলিকে সংরক্ষণ করা সম্ভব। এইসব গীতের কোনো স্বরলিপি না থাকায় শুধু বাণী থেকে সুর করা অসম্ভব। তাই সংরক্ষণের জন্য লিখিত পান্ডুলিপির পাশাপাশি অডিও-ভিজুয়াল মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে।
নাটোরের লোকজ সংস্কৃতিকে যারা লালন করছে সেইসব শিল্পীদের নাম, ঠিকানা নিমেজ্ঝ উদ্ধৃত হলোঃ
মনসার গান বা ভাসান যাত্রা:
§ বিপদ হালদার (দলনেতা), আকবর কবিরাজ, সিধু কবিরা, অনুপ ঘোষ (বায়েন)
গ্রাম- দিঘাপতিয়া, নাটোর সদর উপজেলা।
§ গজেন্দ্র মন্ডল (দলনেতা), নরেন্দ্র মন্ডল, শ্রীদাম মন্ডল, অজিত দাস
গ্রাম- ভূষণগাছা, নাটোর সদর উপজেলা।
§ ইদু কবিরাজ (দলনেতা), আকবর কবিরাজ, হযরত কবিরাজ, আনিসুর রহমান, আলাল, দুলাল
গ্রাম- দিঘাপতিয়া, নটোর সদর উপজেলা।
মাদারের গান:
§ আলন ও তার দল, দিঘাপতিয়া, নাটোর সদর উপজেলা।
§ ইছারুদ্দিন, বনবেলঘরিয়া, নাটোর সদর উপজেলা।
§ সোনা মিয়া, তেলটুপি, চাপিলা, গুরুদাসপুর।
§ রমজান, চকপুর, সিংড়া।
§ রোজিনা বেগম, খাজুরা, নাটোর সদর।
বারোসা গান:
§ রিয়াজ পাগল ও তার দল, রশিদপুর, চাপিলা, গুরুদাসপুর।
মুর্শিদী গান:
§ আশরাফ, রমজান, সাঁঐল, নাটোর সদর।
মালেক দেওয়ান, বিলদহর, সিংড়া।

মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাঃ
নাটোরের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের বীরত্বগাথা যুদ্ধ ইতিহাসের এক গৌরবময় উপাখ্যান। জীবিত এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কথা ও স্মৃতি থেকে জানা যায়, ২৭ নভেমবর ১৯৭০ সালের পরপরই দেশপ্রেমিক নাটোরবাসী বঙ্গবন্ধুকে ভোট দেয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল। ৭ই ডিসেমবর ১৯৭০ এমপি ও ১৭ই ডিসেমবর ১৯৭০-এ এমএলএ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করা সত্ত্বেও ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় দেশের অন্যান্য স্থানের জনগণের মত নাটোরের জনসাধারণের মধ্যেও তীব্র জনরোষের সৃষ্টি হয়। প্রকৃতপক্ষে মিছিল, আন্দোলন ও প্রতিরোধের বহিঃপ্রকাশ ফেব্রুয়ারী/১৯৭০ এর প্রথম দিকেই শুরু হয়েছিল। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষন দেন। তৎকালীন নাটোরের মাননীয় এমপি বাবু শংকর গোবিন্দ চৌধুরী, মাননীয় এমপি জনাব আশরাফুল ইসলাম, মাননীয় এমএনএ ডাঃ মোবারক হোসেন এবং জনাব সৈয়দ মোতাহার হোসেন সহ আরো বেশ কয়েকজন ঢাকায় গমন করে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষন শুনেছিলেন। এ ভাষন নাটোরের জনগণের মাঝেও গণজাগরনের সৃষ্টি করেছিল এবং তা ক্রমে ক্রমে তীব্র হয়ে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধুর সে ভাষনের নির্দেশনা অনুযায়ী ৯ই মার্চ থেকে নাটোরে সংগ্রাম পরিষদ গঠন শুরু হয়। প্রথমে বাগাতীপাড়া এবং পরে নাটোর সদর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় অনেকগুলো সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। প্রতিদিন শত শত মানুষের মিছিল হতে থাকে।

১৩ই মার্চ ১৯৭১ তারিখে সাবেক এন.এস কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং ক্যাম্প শুরু হয়। ট্রেনিং ক্যাম্পে পাকিস্থান থেকে ফিরে আসা তৎকালীন পাকিস্থানী এয়ারফোর্সের কর্পোরাল বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা জনাব এ্যাডভোকেট সাজেদুর রহমান খাঁন সহ আরো অনেকে গ্রেনেড, বায়োনেট চার্জ এবং বিভিন্ন যুদ্ধ কৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন।
২৪শে মার্চ ১৯৭১ তারিখ সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু তৎকালীন মাননীয় এমপি বাবু শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর কাছে খবর পৌঁছান যে, ওরা আমাকে আলোচনার টেবিলে আটকে রেখে গোপনে পাকিস্থান থেকে অস্ত্র ও সৈন্য আমদানী করছে। এ খবর পৌঁছার সাথে সাথে মাননীয় এমপি বাবু শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর বাসায় তৎকালীন সকল জনপ্রতিনিধি সহ সকল স্তরের দেশপ্রেমিক নাটোরবাসী মিলিত হন। সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, যেকোন মূল্যে নাটোরের উপর দিয়ে
  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন